নিজস্ব প্রতিবেদক : ১০বছরের শিশু সোহেল। বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার কমলনগর উপজেলার তোরাবগঞ্জ ইউনিয়নের চর পাগলা গ্রামে। বাবা নিজাম উদ্দিন ইট ভাটায় কাজ করেন। গত বছর তৃতীয় শ্রেণিতে থাকতেই পড়া-লেখা বন্ধ হয় তার। এক বছর ধরে রামগতি-লক্ষ্মীপুর সড়কে লেগুনার হেলপারের কাজ করছে ছোট্ট এই শিশু।
ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত দীর্ঘ সময় ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় তার ছুঁটে চলা। ধূলাবালি, ঝড়-বৃষ্টি, ঠান্ডা গরম সব পরিস্থিতিতেই সোহেলকে ঝুঁলে থাকতে হয় লেগুনায়। এভাবেই কেটে গেছে এক বছর। কাটবে আগামীর দিনগুলি।
সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাত ১১টায় কমলনগরের হাজিরহাট বাজারে এসে একটি লেগুনা থামে। এসময় পেছনে ঝুঁকি নিয়ে ঝুলে থাকা শিশু সোহেল লক্ষ্মীপুর-লক্ষ্মীপুর... বলে চিৎকার করতে থাকে। লেগুনায় যাত্রী তোলতেই তার কচি কন্ঠে জোরালো আওয়াজ।
রাতের ওই সড়কে যাত্রী কম থাকায় লেগুনার বেশিরভাগ আসন খালি। যে কারণে তার চিৎকারও বেশ জোরে। তার ডাকে ওই লেগুনায় দুইজন যাত্রী উঠেন। দ্রুতগতির লেগুনাটি পরের স্টেশন লরেন্স বাজারে গিয়ে পৌঁছে। যাত্রী উঠাতে সোহেল একইভাবে ডাকতে থাকে লক্ষ্মীপুর-লক্ষ্মীপুর...।
এভাবেই করইতলা, তোরাবগঞ্জ, মিয়ারবেড়ি, সুতারগোপটা, ভবানীগঞ্জ চৌরাস্তা, পিয়ারপুর, টুমচর পেরিয়ে রাত পৌনে ১২টায় লক্ষ্মীপুর পৌঁছে তার লেগুনা। রামগতির আলেকজান্ডার থেকে লক্ষ্মীপুর প্রায় ৫৮ কিলোমিটার পথে সে যাত্রী ওঠা-নামা করিয়েছে। একই সময় লেগুনার পিছনে ঝুঁকি নিয়ে ঝুলে-ঝুলে যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়াও আদায় করেছে। এভাবেই প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ বার লক্ষ্মীপুর থেকে রামগতি আলেকজান্ডার আসা-যাওয়া তার।
মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) ভোরে ফের লেগুনাটি লক্ষ্মীপুর থেকে রামগতির আলেকজান্ডারের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে। যাত্রী তোলতে আলেকজান্ডার-আলেকজান্ডার বলে ডাকবে সোহেল । এভাবেই কাটবে তার সকাল-দুপুর-সন্ধ্যা-রাত।
যে বয়সের শিশুরা বই হাতে স্কুলে যায়। স্কুল মাঠে বন্ধুদের সাথে খেলে; আনন্দে-উল্লাসে নিরাপদে পরিবারের দিন কাটে। অথচ সেই বয়সে ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে হেলপারের কাজ করতে হয় ছোট্ট শিশু সোহেলকে।
মধ্যরাতেও শিশু সোহেলের মুখে লক্ষ্মীপুর-লক্ষ্মীপুর…
