রবিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩সত্য ও সুন্দর আগামীর স্বপ্নে...

হাসপাতালের ভুলে সাংবাদিক পলাশের লাশ তিনদিন ধরে মর্গে

হাসপাতালের ভুলে সাংবাদিক পলাশের লাশ তিনদিন ধরে মর্গে

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) অবহেলায় ২ দিন ধরে মর্গে পড়ে আছে লক্ষ্মীপুরের এক যুবকের লাশ। গ্রামে চাচাতো ভাইদের বেদম প্রহারে গুরুতর আহত শাহ মনির পলাশকে (২৮) মেডিকেলে ভর্তির পর দিনই তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। এ ঘটনায় লক্ষ্মীপুর সদর থানার হত্যা মামলার আসামিও গ্রেফতার হয়েছে। অথচ হাসপাতাল থেকে ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর কারণ হিসেবে সড়ক দুর্ঘটনার কথা উল্লেখ করায় বিপাকে পড়েন পলাশের স্বজনরা। এনিয়ে গত ৩ দিন ধরে কান্না ভুলে হাসপাতালের বারান্দায় দৌড়ঝাঁপ করেও কোনো কিনারা করতে পারছেন না পলাশের শোকাহত পরিবারের সদস্যরা। পোস্টমর্টেম ছাড়া পলাশের লাশও দেয়া হচ্ছে না। ফলে ২ দিন ধরে মর্গে পড়ে আছে লাশটি। মর্গ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কাগজপত্র ঠিক হয়ে এলেই হবে লাশের পোস্টমর্টেম। সুপারি গাছ লাগানো নিয়ে বিরোধের জেরে চাচাতো ভাইদের পিটুনিতে গুরুতর আহত শাহ মনির পলাশকে (২৮) বুধবার রাত ৮টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সে ঢামেকে আনা হয়। ভর্তি করা হয় ১০০ নম্বর ওয়ার্ডে। কথা হয় পলাশের বোন বেগমের সঙ্গে। তিনি যুগান্তরকে বলেন, হাসপাতালে আসার পর কমলা রঙের পোশাক পরা (স্পেশাল বয়) দুই যুবক স্ট্রেচার নিয়ে এগিয়ে যায়। পলাশকে স্ট্রেচারে উঠানোর সময় একজন জিজ্ঞেস করে কী হয়েছে? তখন আমাদের মধ্য থেকে একজন বলেন ‘অ্যাক্সিডেন্ট’। ১৫ টাকা দিয়ে টিকিট কাটার কথা জানালে আমি রোগীর নাম এবং আমার নাম বলি। পরে তিনি আমাকে একটি টিকিট এনে দেন। পরে পলাশকে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার সকালে মারা যান পলাশ। এরপরই তার মৃত্যুর কারণ নিয়ে জটিলতা দেখা হয়। পলাশের ফুফাতো ভাই কিরণ বলেন, হাসপাতাল থেকে পলাশের মৃত্যুর কারণ সড়ক দুর্ঘটনা উল্লেখ করে ডেথ সার্টিফিকেট দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এটা হচ্ছে হত্যাকাণ্ড। পলাশ তার চাচাতো ভাইয়ের বেদম প্রহারে মারা গেছেন। তিনি বলেন, টিকিট নেয়ার সময় স্পেশাল বয়ের সঙ্গে জুয়েল নামে আমাদের এক ভাতিজা ছিল। স্পেশাল বয় যখন ‘অ্যাক্সিডেন্ট’ বলে কাউন্টার থেকে টিকিট নিচ্ছিল, তখন সে পাশে দাঁড়ানো ছিল। টিকিট কাউন্টারের লোকেরা অ্যাক্সিডেন্টের ধরন জানতে চাননি। মূলত তাদের কারণেই ভোগান্তিতে পড়েছি। উদাসীনতা রয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষেরও। তিনি বলেন, হাসপাতালের গাফিলতি ও উদাসীনতার কারণে আমরা এ হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার পাব কিনা এ নিয়েও সন্দিহান। তিনি বলেন, অনিয়মের কথা আর কী বলব আপনাদের। পলাশকে ভর্তির পর সিট দেয়া হয়নি। পরে একজনকে ৪০০ টাকা দেয়ার পর একটি সিট দেয়া হয়। শুক্রবার হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কাউন্টারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বুধবার রাত ৮টার পরে শাহ মনির পলাশকে ভর্তি দেখানো হলেও ভর্তি রেজিস্টারে তার নাম লেখা আছে শাহ মনি (২৪)। ভর্তি দেখানো হয়েছে নিউরো সার্জারি ওয়ার্ড-৫ এর অধীনে ২০৪ নম্বর ওয়ার্ডে। মূলত ২০৪ নম্বর ওয়ার্ডটি মহিলা ওয়ার্ড। ওই ওয়ার্ডে তো কোনো পুরুষ রোগী ভর্তি রাখার কথা নয়! এখানে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতির চিত্রই ফুটে উঠেছে। এছাড়া ভর্তি রেজিস্টারে রোগীর দুর্ঘটনার কোনো কারণও উল্লেখ নেই। এ নিয়েও সৃষ্টি হয়েছে রহস্যের। জানতে চাইলে হাসপাতালের এক কর্মকর্তা বলেন, পরে ভুল সংশোধন করে পলাশকে ১০০ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। সেখানেই বৃহস্পতিবার সকালে মারা যান পলাশ। এ ব্যাপারে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাছির উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে হাসপাতালের একজন কর্মকর্তা  বলেছেন, নিহতের স্বজনরা আমাদের কাছে এসেছিলেন। আমরা তাদের বলেছি সংশ্লিষ্ট থানার মাধ্যমে বিষয়টি আমাদের জানাতে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা করে দেয়া হবে। এ ব্যাপারে লক্ষ্মীপুর সদর থানার ওসি লোকমান হোসেন বলেন, বুধবার সুপারি গাছ লাগানো নিয়ে চাচাতো ভাইদের পিটুনিতে গুরুতর আহত হন শাহ মনির পলাশ। পরে তাকে ঢামেকে নেয়া হয়। এ ঘটনায় হত্যা মামলা হয়েছে। তিনজন আসামির একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা হাসপাতালে লিখিত পাঠিয়েছি, মামলার কপিও পাঠিয়েছি। এদিকে শাহবাগ থানার ওসি আবুল হাসান বলেন, ঢাকার বাইরে থেকে ঢামেকে কেউ চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেলে আমরা ময়নাতদন্ত করিয়ে দেই। তিনি বলেন, হাসপাতালের ডেথ সার্টিফিকেটসহ সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র পেলে আমরা শাহ মনির পলাশের লাশের ময়নাতদন্ত করিয়ে দেব। পলাশ লক্ষ্মীপুর জেলা সদরের নাছিমনগর ফকির বাড়ির মনিরুল ইসলামের ছেলে। তিনি রূপবাণী ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকার প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতেন। এছাড়া চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের জেলা প্রতিনিধির সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। পাশাপাশি তিনি বিএ পরীক্ষার্থী ছিলেন।-যুগান্তর
 
  • Facebook
  • Twitter
  • LinkedIn
  • Print
Copy link
Powered by Social Snap