নিজস্ব প্রতিবেদক :
বর্তমান সরকারের চলতি মেয়াদের শেষ সময়ে এসে লক্ষ্মীপুরে টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ সিন্ডিকেট বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে নিয়ম রক্ষার টেন্ডার দাখিল করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন সিন্ডিকেট চক্র।
সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) লক্ষ্মীপুর গণপূর্ত অধিদপ্তরের একটি উন্নয়ন প্রকল্পের ৩৫ কোটি টাকার টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। ওই টেন্ডারে পাহারা বসিয়ে কাজ পাইয়ে দিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে। এভাবে চলতে থাকায় সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব, কাজ হচ্ছে নিম্মমানের।
এদিকে,ভাগবাটোয়ারা নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে বেড়েছে অসন্তোস। অব্যাহত টেন্ডার নিয়ন্ত্রণের কারণে সাধারণ ঠিকাদারদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
কয়েকজন নেতা টাকা হাতিয়ে নিতে অব্যাহতভাবে টেন্ডার নিয়ন্ত্রণের কারণে সরকারের সাফল্য ও ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
জানা যায়, গেলো বছরের ১৪ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালকে ১০০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নতি করণের ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করেন। তা বাস্তবায়নে গণপূর্ত বিভাগ ৩৫ কোটি টাকার দরপত্র আহবান করে। দরপত্র দাখিলের শেষ দিন ছিল ১২ ফেব্রুয়ারি। এর আগে কাজটি নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন নেতা জেলা শহরের একটি রেস্তোরায় বৈঠক করেন। বৈঠকে নোয়াখালীর এক প্রভাবশালী নেতা, লক্ষ্মীপুরের জেলা যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কয়েকজন অংশ নেয়।
সুত্রে জানা যায়। ওই বৈঠকে ৩৫ কোটি টাকার দুই পার্সেন্ট করে দেওয়ার শর্তে পছন্দের নোয়াখালীর এক ঠিকাদারকে কাজটি পাইয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। অন্য ঠিকাদাররা দরপত্ত দাখিল করতে যেন না পারে সেজন্য ওই নেতারা সংশ্লিষ্ট কার্যালয় গুলোতে পাহারা বসান বলে একাধিক সুত্রে জানা যায়। এতে করে ভয়ে সাধারণ ঠিকাদাররা দরপত্র জমা দিতে পারেনি বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট দপ্তর সুত্রে জানা যায়, ওই কাজের জন্য দরপত্র বিক্রি হয়েছে ২০টি। এর মধ্যে নোয়াখালীতে দুটি ও লক্ষ্মীপুরে একটিসহ জমা পড়েছে মাত্র তিনটি। নিয়ম রক্ষার জন্য মেসার্স এম এম বিল্ডার্স, রুপালী জি এম সন্স কনসোর্টিয়াম, ন্যাশনাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ডেভেলেপমেন্ট লিমিটেডের নামে কৌশলে ৩টি পাঁতানো দরপত্র দাখিল করা হয়।
লক্ষ্মীপুর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবুদস ছাত্তার বলেন, কার্যালয়ের ভেতরে কোন কিছু ঘটেনি। বাইরে কি হয়েছে না হয়েছে সেটি আমার দেখার বিষয় নয়। এ পর্যন্ত কোন অভিযোগ পাননি বলে জানান তিনি। দরপত্রগুলো চট্রগ্রাম মুল্যায়ন কমিটি যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানান এ কর্মকর্তা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা কর্মী জানান, শীর্ষ নেতাদের মধ্যে ৫ থেকে ৬ জন সিন্ডিকেট করে একের পর এক টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। দলের নাম বিক্রি করে ভাগবাটোয়ারায় নিজেদের পকেট ভরছেন তারা। সর্বশেষ গণপূর্তের ৩৫ কোটি টাকার টেন্ডার দলের নামে নিয়ন্ত্রণ করেছে। তৃণমূলের নেতা কর্মীরা সকল সুযোগ সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছেন। আগামী নির্বাচনে এর প্রভাব পড়বে বলেও মনে করেন তারা।
এদিকে গণপূর্তের এ টেন্ডারের মতো সাম্প্রতিক সময়ে সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের ২ কোটি ২০ লাখ টাকা, রামগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে প্রায় কোটি টাকা ও শিক্ষা প্রকৌশলী অধিদপ্তরে কোটি টাকার টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া গেলো এক বছরে নানা কুটকৌশলে সড়ক ও জনপদ বিভাগ, এলজিইডি, জন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য বিভাগ ও জেলার ৪টি পৌরসভায় শত কোটি টাকার টেন্ডার সিন্ডিকেটটি নিয়ন্ত্রণ করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব টেন্ডার নিয়ে নিজেদের মধ্যে হাতাহাতি ও মামলার ঘটনাও ঘটেছে।
কয়েকজন ঠিকাদার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সরকারের কোষাগারে প্রতিবছরই নির্ধারিত টাকা দিয়ে প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নবায়ন করি। কিন্তু টেন্ডারে অংশ নেওয়া যাচ্ছেনা। মতলববাজদের রক্ত চক্ষু ও তাদের হাতে লাঞ্চিত হওয়ার চাইতে টেন্ডারে অংশ না নেওয়ায় ভালো বলে মন্তব্য করেন তারা। প্রায় টেন্ডারই সমঝোতা হওয়ায় তারা বঞ্চিত হন বলে জানান।
কেউ কেউ অভিযোগ করেন, অফিস খরচ, রাজনৈতিক নেতাদের পার্সেন্টিজ দিয়ে কাজ করতে গিয়ে বাধ্য হয়ে নিম্মমানের কাজ করতে হয়। এতে করে উন্নয়ন কাজে গলদে ভরপুর থাকে।
এদিকে এমন পরিস্থিতিতে সচেতন মহল মনে করছেন উন্নয়নের নেত্রী শেখ হাসিনার বর্তমান সরকার আমলে লক্ষ্মীপুরে খুনোখুনি কমলেও টেন্ডার সন্ত্রাস বেড়েই চলছে। এখনি তা বন্ধ করা না হলে আগামী সংসদ নির্বাচনে এর বিরুপ প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন তারা।
লক্ষ্মীপুরে ৩৫ কোটি টাকার টেন্ডার সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে
