সাজ্জাদুর রহমান : চাকরি রাজস্বকরণের দাবিতে কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারা (সিএইচসিপিরা) আন্দোলন করছেন। দাবি আদায়ে কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচিতে টানা ১১দিন ধরে জেলার ১৭৫টি ক্লিনিকে তালা ঝুঁলছে। ক্লিনিকগুলো বন্ধ থাকায় মেঘনা উপকূলীয় এলাকাসহ চরাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ অসুস্থ হয়েও সেবা বঞ্চিত রয়েছেন।
বুধবার (৩১ জানুয়ারি) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ও কমলনগর উপজেলার চর ফলকন ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি ক্লিনিক ঘুরে দেখা গেছে সবগুলো ক্লিনিক বন্ধ। এসময় অসুস্থ রোগীরা সেবা নিতে এসে তালা বন্ধ দেখে ফেরি গেছেন।
কমলনগর উপজেলার চর ফলকন ছেলামত উল্লাহ হাওদার বাড়ির দরজার কমিউনিটি ক্লিনিকে লাইজু আক্তার নামের এক গৃহবধূ তার মেয়েকে ঠান্ডা-জ্বরজনিত রোগের জন্য নিয়ে আসেন। ক্লিনিক বন্ধ থাকায় তিনি মেয়েকে নিয়ে প্রাইভেট ডাক্তারের কাছে যায়। একই সময় মেঘনা পাড়ের দ্ররিদ্র এক রোগী ক্লিনিক বন্ধ দেখে বাড়ি ফিরে গেছেন।
পার্শ্ববর্তী সেকান্তর সর্দার বাড়ির দরজার ক্লিনিকে গিয়ে দেখা যায়, সেবা নিতে আসা রোগীরা স্বাস্থ্য সেবা না পেয়ে বাড়ি ফিরছেন।
স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিন ওই ক্লিনিকে প্রায় দুই শতাধিক রোগী সেবা নিতেন। কিন্তু গত ১১দিন ধরে টানা বন্ধ থাকায় রোগীরা এসে ফিরে যেতে হচ্ছে।
এমনই চিত্র জেলার রামগতি, রায়পুর, রামগঞ্জসহ পুরো জেলা ঝুড়ে। এতে ভেঙে পড়েছে তৃণমূলের স্বাস্থ্যসেবা। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা ঠান্ডাজনিত রোগে চিকিৎসা না পাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। আর্থিকভাবে স্বচ্ছলরা প্রাইভেট হাসপাতালে যেতে পারলেও দরিদ্র ও অসহায়রা কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে সেবা পাওয়ার প্রত্যাশায় করছেন।
লক্ষ্মীপুর উপকূলীয় জেলা। বিশেষ করে জেলার রামগতি, কমলনগর, রায়পুর ও লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার উপকূলীয় ও চারাঞ্চলের কয়েক লাখ মানুষ কমিউনিটি ক্লিনিকের ওপর নির্ভর। আন্দোলনে ক্লিনিক বন্ধ থাকায় তারা এখন চিকিৎসা সেবা বঞ্চিত।
সিভিল সার্জন অফিস ও কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারা (সিএইচসিপি) সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রী কর্মসূচীর অংশহিসাবে চাকরি রাজস্ব করণের দাবিতে গত ২০ জানুয়ারি থেকে জেলার ১৭৫টি কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করছে। ২০, ২১ ও ২২ জানুয়ারি জেলার কর্মরত সকল সিএইচসিপি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে অবস্থান কর্মসূচী পালন করেন। ২৩ ও ২৪ জানুয়ারি সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয় তারা। এরপর থেকে ঢাকা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আন্দোনলন করছেন।
সিএইচসিপি অ্যাসোয়িয়েশনের লক্ষ্মীপুর জেলা শাখার সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর জানান, আমাদের একটা দাবি-চাকরি রাজস্বকরণ। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরবো না। ০১ ফেব্রুয়ারি থেকে আমরণ আনশন করবেন বলে জানান তিনি।
লক্ষ্মীপুরের সিভিল সার্জন ডা. মোস্তফা খালেদ আহমেদ বলেন, কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারা ক্লিনিকগুলো বন্ধ করে আন্দোলন করছেন। আমরা রোগীদেরকে বিকল্পভাবে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।
উল্লেখ্য, গত ১৮ জানুয়ারি সিএইচসিপি অ্যাসোয়িয়েশনের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম ও প্রধান উপদেষ্টা কামাল সরকার ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটে সংবাদ সম্মেলনে চাকরি রাজস্বকরণের জন্য কর্মবিরতিসহ অবস্থান কর্মসূচির ঘোষনা দেন। প্রাথমিক পর্যায়ে উপজেলা ও জেলাতে অবস্থান কর্মসূচী পালন করেছে সিএইচসিপিরা। এরপরেও যদি দাবি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত না আসে তাহলে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আমরণ অনশন কর্মসূচিতে যাবে সারাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত কমিউনিটি হেলথ প্রোভাইডাররা।
