বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩সত্য ও সুন্দর আগামীর স্বপ্নে...

বাড়ির ছাদে থানকুনি চাষ

বাড়ির ছাদে থানকুনি চাষ

থানকুনি পাতার উপকারিতার জুড়ি নেই। এর ব্যবহার আদি আমল থেকেই। রোগ নিরাময়ে এ মহৌষধ এখন তেমন চোখে না পড়লেও একজন স্বাস্থ্য সচেতন শিক্ষক বাড়ির ছাদে শখ করে থানকুনির চাষ করেছেন। বহু রোগ উপশম হওয়া ভেষজ গুণসমৃদ্ধ এ উদ্ভিদ তিনি নিজেও ব্যবহার করেন; অন্যকে দিয়েও সহযোগিতা করেন।

লক্ষ্মীপুর আদর্শ সামাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আরিফুল ইসলাম। তিনি শহরের মদিন উল্লাহ্ হাউজিংয়ের বাড়ির ছাদে টবে সবজি চাষ করেন। বিভিন্ন শাক-সবজির পাশাপাশি থানকুনিও রয়েছে তার আবাদের তালিকায়। মৌসুম ও প্রকৃতির সঙ্গে মিলেয়ে বিভিন্ন শাক-সবজি চাষ করলেও সারা বছর থানকুনির চাষ থাকে তার বাড়ির ছাদে।

আমাদের দেশে উদ্ভিদটিকে কমবেশি প্রায় সবার চেনা। আগে গ্রামের রাস্তার পাশে, পরিত্যক্ত জমি ও বাড়ির আঙিনায় ছায়াযুক্ত স্থানে এ উদ্ভিদের দেখা মিলতো। অপরিকল্পিত বাড়িঘর নির্মাণ, কৃষি জমি হ্রাসসহ নানা কারণে গ্রামগঞ্জে আগের মতো থানকুনি চোখে পড়ে না। শহরে তো এর দেখাই মেলা ভার। বর্তমান নগরজীবনে বাড়ির ছাদে স্কুল-শিক্ষকের থানকুনি চাষের উদ্যোগ সত্যিই ব্যতিক্রমী।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, বাড়ির ছাদ যেন একটি সবজি ও ভেষজ উদ্ভিদ বাগান। পুরো ছাদে ছোট-বড় বিভিন্ন আকৃতির টব। টবে চাষ করা হয়েছে বেগুন, ঢেঁড়শ, মরিচ ও শাকসহ বিভিন্ন প্রজাতির সবজি। এছাড়াও রয়েছে থানকুনি, তুলসী ও মেহেদীসহ বিভিন্ন প্রজাতির ভেষজ গাছ। বাড়ির ছাদ জুড়ে আছে ১৪/১৫টি থানকুনির টব। এতে গাছগুলো বেড়ে উঠেছে। কয়েকটি টবে ঢেঁড়স, মরিচ ও বেগুনের সঙ্গে থানকুনি বেড়ে উঠতে দেখা গেছে।

স্কুল শিক্ষক আরিফুল ইসলাম বলেন, শখ করে অবসর সময়ে ছাদে শাকসবজি ও কিছু ভেষজ উদ্ভিদের চাষ করি। রাসায়নিক সার ও কীটনাশকমুক্ত এসব শাকসবজি পারিবারিক চাহিদা মেটাই।

থানকুনি বিষয়ে তিনি বলেন, অঞ্চলভেদে থানকুনি পাতাকে নানা নামে ডাকা হয়। প্রয়োজনে শহরে এটি খুঁজে পাওয়া যায় না। নিজের ও অন্যের প্রয়োজনের কথা চিন্তা করে গত কয়েক বছর ধরে টবে থানকুনির চাষ করছি।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট নোয়াখালীর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মুহাম্মদ মহী উদ্দীন চৌধুরী বলেন, থানকুনির বৈজ্ঞানিক নাম সেনটেলা এসিয়াটিকা। খ্রিস্টপূর্ব ৯০০ থেকে এটি ইউনানী, আয়ুর্বেদিক ভেষজ চিকিৎসায় ব্যবহার হয়ে আসছে। নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, সাভার, কেরানীগঞ্জ এলাকায় ফল ও সবজি বাগানে ছায়াযুক্ত স্থানে সমন্বিতভাবে কৃষকরা থানকুনি আবাদ করছেন। কৃষকের জন্য এটি বাড়তি লাভ। থানকুনি চাষে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার করতে হয় না। লাগে না বাড়তি খরচ। প্রয়োজনীয় যত্ন নিলে পাওয়া যায় অর্থ ও সুস্বাস্থ্য।

থানকুনি পাতায় রয়েছে ওষুধি গুণ। থানকুনি পাতা সব ধরনের পেটের রোগের মহৌষধ। এর ভেষজ গুণাবলি ছাড়াও সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার তৈরি করা যায়। অনেকেই ভাতের সঙ্গে থানকুনি পাতার ভর্তা ও সালাদ খান। কেউ-কেউ শাক হিসেবেও রান্না করেন। মুখে ঘা, ক্ষত, সর্দির জন্য উপকারী।

আলসার, বাতের ব্যাথা, হাঁপানি, চুলকানি ও অন্য চর্মরোগ মুক্তিতে কার্যকর ভূমিকা রাখে। নিয়মিত থানকুনির রস খেলে ত্বক ও চুল সুন্দর থাকে। শরীরের ক্ষতিগ্রস্ত কোষকে পুনর্গঠনেও সাহায্য করে।
  • Facebook
  • Twitter
  • LinkedIn
  • Print
Copy link
Powered by Social Snap