রাকিব হোসেন আপ্র : জীবনযুদ্ধে সফল এমন পাঁচ নারীকে লক্ষ্মীপুরে ‘জয়িতা সম্মাননা’ প্রদান করা হয়েছে। নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বেগম রোকেয়া দিবস উদযাপন উপলক্ষে ‘জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ’ শীর্ষক বিশেষ কার্যক্রমের মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল এই নারীদের চিহ্নিত করা হয়।
শনিবার সকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত বেগম রোকেয়া দিবসের আলোচনা সভায় তাদের নাম ঘোষণা করা হয়। পরে তাদের হাতে ‘জয়িতা সম্মাননা’ সনদ তুলে দেন জেলা প্রশাসক হোমায়রা বেগম ও অন্যান্য অতিথিরা।
পাঁচটি ক্যাটাগরীতে লক্ষ্মীপুর জেলা পর্যায়ে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়েছেন, সেলিনা আখতার, আইরিন সুলতানা, রীনা রানী সাহা, মারজান ও মাহেনারা পারভীন।
সফল জননী হিসেবে জয়িতা সম্মাননা পেয়েছেন অ্যাডভোকেট সেলিনা আখতার। লক্ষ্মীপুরের দক্ষিণ মজুপুর গ্রামের মৌ. রহিম উদ্দিন আহম্মেদ এর কন্যা তিনি। বৈবাহিক জীবনে নির্যাতনের শিকার হয়ে দুই ছেলেকে নিয়ে স্বামীর বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হন তিনি। এরপর শুরু হয় তার সংগ্রামী জীবন। আইনজীবী পেশায় থেকে দুই ছেলে আসাদুজ্জামান নুর বিজয় ও আহিদুজ্জামান নুর জয়কে পড়াশুনা করান। তার বড় ছেলে বিজয় এলএলবি ও এলএলএম পাশ করে জুডিসিয়াল সার্ভিসে যোগদান করেন। ছোট ছেলে জয় ৩৩তম বিসিএস-এ উত্তীর্ণ হয়ে বাংলাদেশ পুলিশের এএসপি পদে যোগ দেন।
শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী জয়িতা আইরিন সুলতানা। লক্ষ্মীপুর পৌরসভার বাঞ্চানগর গ্রামের আলী আকবরের কন্যা তিনি। নারী উদ্যোক্তা হিসেবে তিনি সুপরিচিত। নিজ উদ্যোগে লক্ষ্মীপুর পৌর শহরের ঝুমুর এলাকায় প্রতিষ্ঠিত করেন আইরিন কম্পিউটার এন্ড ট্রেনিং সেন্টার। নারীদের সমাজে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে ৩টি কম্পিউটার দিয়ে বিনামূল্যে শেখার ব্যবস্থা শুরু করেন। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানে ২০টি ল্যাপটপ রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন শতাধিক নারী।
জয়িতা রীনা রানী সাহা অর্থনৈতিকভাবে সফল একজন নারী। লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জের ধর্মপুর গ্রামের বাসিন্দা তিনি। ছয় ভাইয়ের মধ্যে এক বোন তিনি। বিএ পাশ করে চাকরির জন্য অনেক ঘুরাঘুরি করেও না পেয়ে ব্যবসা করার সিদ্ধান্ত করেন তিনি। বর্তমানে রীনা বুটিকস নামে তার একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এছাড়াও তিনি মহিলাদেরকে সেলাই, ব্লক ও বাটিকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। তার প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে প্রায় ৫ লক্ষাধিক টাকার মালামাল রয়েছে।
নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করে জয়িতা সম্মাননা পেয়েছেন মারজান। রায়পুর উপজেলার লুধুয়া গ্রামের ভূঁইয়া বাড়ির শরিফ হোসেন এর স্ত্রী তিনি। তার বাবা মানসিক প্রতিবন্ধী। গরীবের ঘরেই বিয়ে হয় তার। সংসার জীবনে এক দুর্ঘটনায় কোমর থেকে পায়ের তালু পর্যন্ত পুঁড়ে যায় তার। তবুও থেমে থাকে নি তার সংগ্রামী জীবন। মানুষের বাড়িতে কাজ করে সংসারের অভাব অনটন মোচনের চেষ্টা চালিয়ে গেছেন তিনি। বর্তমানে তার এক ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত রয়েছে। অন্য দুই ছেলেও পড়াশুনা করছেন। মেয়েকেও শিক্ষার আলোয় আলোকিত করে বিয়ে দিয়েছেন তিনি।
জয়িতা মাহেনারা পারভীন সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখেছেন। রামগঞ্জ উপজেলার পানপাড়া গ্রামের মোহাম্মদ উল্যাহ পাটোয়ারীর স্ত্রী তিনি। সংসার জীবনের শুরু থেকেই তিনি ছিলেন সংগ্রামী। তার স্বামী শুরুতে বেকার থাকলেও পরে উপজেলার লামচর ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর থেকেই স্বামীর পাশাপাশি সমাজ উন্নয়ন কর্মকান্ডে নিজেকে নিয়োজিত করেন। বাল্য বিবাহ নিরোধ, যৌতুকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন ও যৌন হয়রানি বিষয়ে বিভিন্ন সভা সেমিনার আয়োজন করেন তিনি। তার এসব কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
প্রসঙ্গত, লক্ষ্মীপুর সদর, রায়পুর, রামগঞ্জ, রামগতি ও কমলনগর উপজেলার ৫ জন করে ২৫ নারী জয়ীতাকে সনদপত্র দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে জেলা পর্যায়ে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়েছেন, সেলিনা আখতার, আইরিন সুলতানা, রীনা রানী সাহা, মারজান ও মাহেনারা পারভীন।