মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩সত্য ও সুন্দর আগামীর স্বপ্নে...

খাবারের মান-পরিমাণ নিয়ে বিস্তর অভিযোগ

খাবারের মান-পরিমাণ নিয়ে বিস্তর অভিযোগ

লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে ঠিকাদারের সরবরাহ করা খাবারের মান ও পরিমাণ নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই রোগীদের। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত হাসপাতালে অবস্থানকালে রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের সরবরাহ করা হয় নিম্নমানের খাবার।

অনেক সময় পরিমাণেও কম দেওয়া হয়। এ ছাড়া সময়মতো দেওয়া হয় না খাবার। এ জন্য বাধ্য হয়ে বাড়ি থেকে খাবার আনতে হয় রোগীর স্বজনদের। অনেকে চড়া মূল্যে হোটেল-রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার কিনে আনে।।

রামগঞ্জ পৌরসভার নৈশপ্রহরী তছলিম উদ্দিন মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে গত সোমবার রাতে ভর্তি হন ১০০ শয্যার এ হাসপাতালে। গতকাল দুপুর দেড়টার দিকে তিনি ক্ষোভের সঙ্গে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘হসপিটালের খাওন দেখলে মনে কয়, অনই বাইত চলি যাই। খানা ভালা না। হাঙ্গাশ মাছ মানুষও তো খায় না। ’ দোতলায় পেয়িং রুমে ভর্তি থাকা লাহারকান্দি গ্রামের বৃদ্ধ আজিজ উল্যা বলেন, ‘হাসপাতালের খাবার দেখলেই খেতে মন চায় না।।

’ ওই সময় তাঁর নাতনি নবম শ্রেণির ছাত্রী সুরমা আক্তার বাড়ি থেকে বক্সে করে খাবার নিয়ে আসে। ভবানীগঞ্জ এলাকার কৃষক মো. আজাদ বেড না পেয়ে অবস্থান করছেন দোতলার মেঝেতে। তিনি জানান, হাসপাতালে গোসল করায় সমস্যা। খাবারও হোটেল থেকে কিনে আনতে হয়। এ জন্য তিনি বাড়ি চলে যাবেন।।

সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘নিম্নমানের খাবার সরবরাহের কারণে ঠিকাদারকে একাধিকবার ডেকে সতর্ক করা হয়েছে। বিষয়টি আমাদের নজরদারিতে রয়েছে। ’।

চোরের উত্পাত : চিকিত্সা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনদের মোবাইল ফোনসেট, টাকা, স্বর্ণালংকারসহ বিভিন্ন সামগ্রী চুরি হচ্ছে অহরহ। একটি সংঘবদ্ধ চক্র পরিকল্পিতভাবে জটলা সৃষ্টি করে টিকিট কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে সর্বস্বান্ত করছে রোগী বা তাদের স্বজনদের। রোগীদের ওয়ার্ডে প্রায়ই চুরির ঘটনা ঘটছে। চুরি ঠেকাতে কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে ২৪টি ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা স্থাপন করেছে। কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রতিদিনই কিছু সময় পর পর টিকিট কাউন্টারে ও ওয়ার্ডে নজরদারি চালানো হয়। রোগী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত তিন মাসে শতাধিক চুরির ঘটনা ঘটেছে হাসপাতালে। ঝামেলা এড়াতে অনেকে পুলিশকে জানায়নি।।

জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক হিজবুল বাহার রানা জানান, হাসপাতালের বারান্দায় গত মঙ্গলবার মধ্যবয়সী এক নারীকে অঝোরে কাঁদতে দেখে তিনি এগিয়ে যান। ওই সময় মহিলা জানান, তাঁর হাতব্যাগ থেকে পাঁচ হাজার ১০০ টাকা চুরি হয়ে গেছে। বাড়ি যাওয়ার মতো টাকাও তাঁর কাছে নেই। পরে রানা ওই মহিলাকে ৫০০ টাকা দেন।।

হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার বলেন, ‘চুরি ঠেকাতে আমি সার্বক্ষণিক তদারকি করি। সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে এরই মধ্যে ১২-১৪ জন চোরকে শনাক্ত করে পুলিশকে জানানো হয়েছে। পুলিশও নিয়মিত টহল দেয়। ’।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও জেলা সিভিল সার্জন মোস্তফা খালেদ বলেন, হাসপাতালে নারী ওয়ার্ডগুলোতে চুরির ঘটনা বেশি ঘটে। রোগীদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার কারণে সেখানে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা যাচ্ছে না।।

সদর হাসপাতাল এলাকায় টহলের দায়িত্বে থাকা মডেল থানার পুলিশের এএসআই মো. মফিজুল ইসলাম বলেন, চুরি ঠেকানোসহ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রতিদিনই দিনরাত টহল দেওয়া হয়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে অপরাধীরা সটকে পড়ে।।

রোগী বাগিয়ে বাইরে নেওয়ার অভিযোগ : প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও লোকবল সংকটের অজুহাত দেখিয়ে কয়েকজন চিকিত্সক রোগীদের বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকমুখী করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তাঁরা বাইরে ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগীদের সিজার ও অপারেশনের জন্য চুক্তিবদ্ধ হতে প্রভাবিত করেন। অভিযোগ রয়েছে, হাসপাতালটির সিনিয়র কনসালট্যান্ট (গাইনি) শঙ্কর কুমার বসাক রোগীদের বেসরকারি হাসপাতালে সিজার, অপারেশন করাতে প্রভাবিত করছেন। তিনি হাসপাতালে বসেই রোগীদের দিচ্ছেন নিজের প্রাইভেট চেম্বারের ভিজিটিং কার্ড।।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও জেলা সিভিল সার্জন মোস্তফা খালেদ বলেন, এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। হাসপাতালের কোনো চিকিত্সক যদি রোগীদের বেসরকারি হাসপাতালে অপারেশন ও সিজার করাতে বাধ্য করেন, তবে তাঁর বিরুদ্ধে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।।

বাইরে রোগী নিয়ে অস্ত্রোপচার করেন নার্স : হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স বিকাশ চন্দ্র ভৌমিক নিজেকে অর্থোপেডিক চিকিত্সক পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতাল থেকে রোগী বাইরে বাগিয়ে নিয়ে চুক্তিতে অপারেশন করে আসছিলেন। পাঁচ থেকে ২০ হাজার টাকায় তিনি রোগীদের অপারেশন করেন। সম্প্রতি চন্দ্রগঞ্জে এক শিশুর অপচিকিত্সার কারণে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাঁকে আটক করেন। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতে দুই লাখ টাকা জরিমানা ও মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পান তিনি।।

মানবাধিকারকর্মী নুর মোহাম্মদ জানান, সেবিকাসহ স্টাফরা রোগীদের সেবা করে টাকা হাতিয়ে নেন। চাহিদামতো টাকা না দিলে অনেক সময় সেবা মেলে না। তাঁরা দুর্ব্যবহারও করেন। এমনিতেই তাঁদের কিছু বকশিশ দেওয়া হয়।।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরুজ্জামান জানান, সরকারি হাসপাতালে দালালদের উপদ্রব এবং বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতাল-ক্লিনিকের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে একাধিকবার ভ্রাম্যমাণ আদালত চালানো হয়েছে।
  • Facebook
  • Twitter
  • LinkedIn
  • Print
Copy link
Powered by Social Snap